" সাইবার যখন ভুতের কবলে " - (Read Without Logic)

হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছেন।
শুধু মাত্র রমজান মাস বলে এরিয়ে যেতে চাইছিলাম কিন্তু পোষ্ট করবো কথা দিয়েছিলাম বলেই আবার লিখতে বসে গেলাম।

সেই ৫-৬ বছর আগের কথা ঘটে ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি যা হয়তো আমি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝাতে পারবোনা তবুও অনুরোধ রইলো রাতে ঘড়ের লাইট নিভিয়ে পড়ার। অন্ধকারে পড়তে বলছি এজন্যই যখন অন্ধকার থাকে তখন কল্পনা শক্তির সঞ্চয় হয় যা হয়তো আমার সাথে ঘটে যাওয়া ফিলিংস টির সাথে আপনার পরিচয় সাময়িক সময়ের জন্য হলেও করিয়ে দিতে পারে যদি আপনি একান্তই মনোযোগ টি আমার গল্পটির দিকে দিতে পারেন।  একটু হলেও নিজের মনের ভিতর কল্পনাতে একটি গ্রামের চিত্র তুলে ধরে রাতের আধারে নিজেকে একা পথিক মনে করে নিয়ে গল্পটা পড়তে পারেন।

Music টি Play করে দিয়ে কানে HeadPhone লাগিয়ে পড়া শুরু করুন।

ঈদের ছুটি তাই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া আর কি?


গ্রাম আমার অনেক ভালো লাগে তাই গ্রামে গেলে বাসার কথা ভুলে যেতাম সারাদিন টই টই করে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতাম কারন এই সময়টাতে কোন Rules থাকতোনা বেড়াতে এসেছি বলে কথা। আর সাথে Cousin দের সাথে একত্রিত হওয়ার মজাটাই ছিল অন্য রকম।

তো চলুন ভূমিকা ছেড়ে মূল গল্পের প্রসংগে আসা যাক।

একদিন ঘুরতে যাবো ঠিক করলাম বিকালে।
উদ্দেশ্য  ইন্ডিয়া বর্ডারের আশে পাশের গ্রাম ঘুরবো এবং কিছু বন্ধুদের সাথে নিয়ে আড্ডা দিবো। যেই কথা সেই কাজ বিকালে বেড়িয়ে পড়লাম গ্রাম গুলো ঘুরতে ঘুরতে একসময় হাপিয়ে উঠলাম তাই ঠিক করলাম আড্ডা দেওয়ার তাই সালধর নামক একটি গ্রামের 
নদীর পাশে সময় কাটানোর জন্য চলে গেলাম ততক্ষনে রাত ৮ টা।

বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম নদীর কিনারে একটি ছোটখাট বনভোজনের আগের কোন পরিকল্পনা ছাড়া যদি এমন আয়োজন হয় তবে হ-য-ব-র-ল তো হয়েই যেতে পারে এবং তাই ঘটলো তারপর ও সব মোটামুটি চলতে থাকলো।

বসলাম গল্প করতে সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে সময়ের কথা ভুলে বসেছিলাম বেজে গেল ১:৩০ ব্যস হয়ে গেল কাজ সাড়া তারপরও খাওয়া দাওয়া বাকী আর তা করতে গিয়ে পুরো ২:২০ মিনিট। আমার মনে হয় যারা সে গ্রামে থাকে তাদের অর্ধেক ঘুম হয়ে গেছে ততক্ষনে।
যাই হোক বিদায়ের পালা সবার বাসাই কাছে ছিল এবং রাত বেশী হয়ে যাওয়ায় সবাই তড়িঘড়ি করছিল নিজ ঘরে ফিরার জন্য তারপর ও সৌজন্যের খাতিরে আমাকে এগিয়ে দিতে চাইলে সোজাসাপ্টা না বলে দিলাম।

শত হলেও শহুরে ছেলে ভয় ডর তেমন নাই তাই সবাইকে উপদেশ দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে পথচলা আরম্ভ করলাম।

আমি গাড়ির সন্ধান করছি ভুলেই গিয়েছিলাম যে রাত ২:৩০ বাজে আর তখন মাথায় আসলো, পুরো ১ ঘন্টার ও বেশী সময় হাটতে হবে বাসায় ফিরতে হলে।


আর আমি যেখানে আছি সেখানে আর কারো উপস্থিতি আশা করা যেন খড়ের গাদায় সুই খোজা। যতদূর চোখ যায় শুধু ধানের জমি দেখা যায় আর অনেক দূর পর পর একটা দুইটা ঘর চোখে পড়ে।



আকাশের অবস্থা ভালো হাল্কা চাঁদের আলো ছিল তাই গান মোবাইলে গান ছেড়ে শুনতে শুনতে হাটছিলাম  নিরবতা যাতে গ্রাস করে না নেয় সেজন্য।

কথায় আছে যেখানে বিপদের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।

চার্জের লাল বাতি সহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার নোটিশ।
তখন আমি দেড়পাড়া নামক গ্রামের নদীর পাশ কেটে সামনে এগোচ্ছি।

কেমন যেন ছমছমে নিরবতা আমাকে গ্রাস করে নিল।
চারদিকে বাতাসের বয়ে যাওয়া শো শো শব্দ কানে বাড়ি দিচ্ছে।
কিছুদূর সামনে তালগাছের সাড়ি আর নদী বেকে যাওয়া মোড় তখন প্রথম চোখ পড়লো তালগাছ গুলো হেলছে দুলছে কিন্তু এত পরিমান বাতাস বইছিল না যে এত লম্বা গাছ গুলো সামনে পিছনে জোরে জোরে দুলবে।


যাই হোক ভয় কে জয় করে হাটা শুরু করলাম এবং এবার যা দেখছি তা নিজেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে গাছ গুলোর মাথা ধরে যেন কেউ টেনে মাটির কাছে নিয়ে আসছে এবং বার বার ছেড়ে দিচ্ছে আর তা সজোরে সোজা হয়ে যাচ্ছে।

এবার প্রথম মনে ভয়ের সঞ্চার হলো সাথে কৌতুহল তাই পথ ভুল করেই হাটা আরম্ভ করতে নিয়েছিলাম তালগাছের রাস্তা দিয়ে যেটা ঘন জংগল এবং বসতি নেই। কেমন যেন গায়ের পশম গুলো খাড়া খাড়া করে দিচ্ছিল এবং সেই মুহুর্তে কোন কারনে মোবাইল টি শেষ বারের মত মরণ চিৎকার ছেড়ে বন্ধ হয়ে গেল এবং তখন মাথায় আসলো যে আমি তো জংগলের পথে চলে এসেছি সাথে সাথে দোয়া দুরুদ পড়া শুরু করে সঠিক রাস্তার উদ্দেশ্যে পা চালালাম।


কিছুটা সময় না যেতেই প্রচন্ড বাতাস আরম্ভ হলো। এমনি তেই আমি পাটকাঠির মত মনে ভয় হচ্ছিল উড়ে গিয়ে নদীতে না পড়ে যাই তাহলে আজ নিস্তার নেই কিছু একটা যে ঘটতে যাচ্ছে অশুভ তা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছিলো।

পাকা রাস্তায় উঠতেই বাতাসে তালগাছ গুলোর দুলুনি বন্ধ হয়ে গেল।
যাক একটু সাহসের সঞ্চার হলো কিছুদূর দূরে একটি ঘর দেখে আর সেটাও হারিয়ে ফেললাম একটি শব্দ শুনে ঠিক আমার পিছন থেকেই আসছিল যেন কেউ একটি লোহার স্যান্ডেল বা কাঠের খড়ম পড়ে আমার পিছন পিছন হাটছিলো।

হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম ঠিক পিছনের হাটার শব্দটিও দ্রুত গতির হয়ে গেল। তখন একবার পিছে ফিরে তাকাবো ভাবছিলাম কিন্তু সেই সাহস হলোনা আমার বড় মামা বলেছিল এরকম কোন অভিজ্ঞতা হলে পিছে দেখতে যেওনা ঘাড়টাই মটকে দিবে। তাই সূরা জোড়ে জোড়ে পড়া শুরু করলাম আর দিলাম ভোদৌড় মানে বুঝছেন তো?


মাথায় চিন্তা একটা ই পিছনের জন যাতে আমাকে ধরে না ফেলে। কতদূর এক দৌড়ে গিয়েছি বলতে পারবো না তবে সামনে দেখলাম এক কবরস্থান দিলাম দেয়াল টপকে লাফ কবরস্থানের ভিতর।
গিয়ে পড়লাম এক বাশ ঝাড়ের পাশে।


এক হুজুর বলেছিল যে কবরস্থানে খারাপ কিছু প্রবেশ করতে পারে না তাই লাফ দিয়েছিলাম আর কি?

দূরে একটি ছায়ার মত দেখতে পেলাম যা মাটির রাস্তাতে কেমন জানি করছিল বুঝে উঠতে পারলাম না আসলে সেটা কি ছিল তবে এখনো শান্ত হতে পারলাম না মনে পড়ে গেল কিছু ভুতের মুভির কাহিনী যেগুলোতে কবরস্থানের মৃত মানুষ গুলো জেগে ঊঠে এবং টেনে নিয়ে যায়।


তবে সেটা না হলেও টের পেলাম আমি যেখানে লাফিয়ে পড়েছি সেখানে একটি কবর ছিল এবং আমার একটি পা সেখানে ঢুকে গিয়েছিল অনেকটুকু আর কি মন মানে যে এখানে বসে থাকে কোন মতে পা টেনে বের করলাম এবং চারদিকে তাকালাম কিছু দেখা যায় কিনা না একমাত্র আমিই একা এক প্রকৃতির মাঝে যেখানে ঝিঝির ডাক বাতাসের শব্দ আর বাশের সাথে বাশের বাড়ি খাওয়ার মত শব্দ দিয়ে আমাকে বশ করে রেখেছিল।

জানিনা এভাবে কতক্ষন ছিলাম।

অনেকক্ষন পর দেখলাম যে একটি আগুনের শিখা দূর থেকে আমার দিকেই আসছে ধীর গতিতে এটা দেখে মনে হলো হৃদপিন্ড টা বুঝি বন্ধ হয়ে যাবে।

কিন্তু আলোর শিখা যত কাছে আসতে লাগলো ততো হার্ট বিট বাড়তে থাকলো।

ভেবে নিলাম আজকেই হয়তো শেষ......
কিন্তু না এটাতো একটা রিক্সা আসছে হ্যারিকেন জালানো তাই দূর হতে মতিভ্রম হচ্ছিল যাক আশার আলো জেগে উঠলো।


কাছে আসতেই কবরস্থান এর দেয়াল টপকিয়ে সামনে দাড়ালাম আর আমার এই কান্ড দেখে চমকে যায় রিক্সা যে চালাচ্ছে সেই ব্যক্তিটি একবারে বড়সড় বাঘের গর্জন দিয়ে উঠে ভয় পেয়ে। আমি তাকে গিয়ে স্পর্শ করি এবং ভয় যাতে না পায় কথা বলি।

অবশেষে তার ভয় গেলো বললো আমি এত রাতে কবরস্থানের ভিতর কি করি?

তাকে পুরো ঘটে যাওয়া ঘটনা জানালাম তারপর সে বললো চলেন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি আমি আর এবার হিরো সাজার জন্য না বলতে পারলাম না কারন আমি না বলার জন্য কবরস্থানে একা সময় কাটিয়েছি,  খড়ম পড়া কাউকে দৌড় প্রতিযোগিতায় হারিয়েছি, তালগাছের নৃত্য দেখেছি, ভুল পথে মানে জংগলে চলে গিয়েছিলাম।

অবশেষে আমি আমার বাসায় এসে পৌছলাম।
আমাকে নামিয়ে দিল যে লোকটি সে টাকা সাধলাম নিতে চাইলোনা আমাকে অনেক উপদেশ দিলো গভীর রাতে কিছু পথে একা না চলার।
তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে দাড়াতেই মনে পড়ল একটা ধন্যবাদ তো দেই তাকে কিন্তু দেরী হয়ে গেল।
সে চলে গিয়েছে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তো যাওয়া সম্ভব নয়। না তার দেখা আর মিলেনি তার চেহারার কাউকে আর খুজেও পেলাম না।

সে দেখতে বয়স্ক, সুন্দর দাড়ি, চেহারায় কোন ভাজ ছিলনা আর একটা কথা মনে পড়ল আর তা হলো সে আমার সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছে যা তখন ভয়াল মুহুর্তে মনে পড়েনি যে এখানে তো সবাই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।

যাই হোক সব প্রশ্নের উত্তর মিলানো যায় না জানিনা সে কে এবং কেন আসলো ঊপকার করলো কিছু না নিয়ে বরং উপদেশ দিয়ে চলে গেল।


যদিও গল্পটি তেমন ভয়ংকর নয় তবে রহস্যজনক তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম যদি ভালো লেগে থাকে তবে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

সবশেষে পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন আর রোজা রাখার পাশাপাশি ভালো কাজ করুন বলা যায়না কখন কি ঘটে যায়।

আজকের মত বিদায় দেখা হবে অন্য কোন সময় নতুন কিছু নিয়ে।

সৌজন্যে : Cyber Prince


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url