ভুতুড়ে বাগান বাড়ি পর্ব - ১

গল্প:- #বাগান_বাড়ি পর্ব ১

ঘড়ির কাটা যেন চলতে চাচ্ছে না ।
স্কুল মাঠে বসে আছে নাফিস আর হৃদয় ।
কিন্তু কারো শুন্যতা বিরাজ করছে তাদের মাঝে ।
অধীর আগ্রহে বসে আছে কারো জন্য ।
কিন্তু কে সে..? যার জন্য নিরবতার অবসন ঘঠছে না ।
ঐ তো আসছে বলল হৃদয় । গুরে তাকাল নাফিস,
জিশানের দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে রাখল সে ।
কিরে ব্যাঙের মত ফুলে আছিস কেন বলল জিশান ।
জিশানের দিকে তাকিয়ে উত্তর না দিয়েই বলল নাফিস
কয়টায় আসার কথা ছিল তোর...?
মানলাম একটু দেরু হয়েছে তাই বলে কি রাগ দেখাতে হবে...বসতে বসতে বলল জিশান ।
আচ্ছা বল কেন আসতে বললি (হৃদয়)
একটা ভুতুরে বাড়িতে যেতে হবে বলল জিশান ।
তুই বলছিস এই কথা (নাফিস)
কেন সন্দেহ আছে নাকি উৎসুকভাবে নাফিসের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল জিশান ।
অবশ্যই আছে , ভুত বলতে কিছু আছে নাকি..?তুই তো ভুতের গল্পও পড়িস না ভুত বিশ্বাস তো দুরের কথা আর সেই তুই কিনা বলছিস ভুতুড়ে বাড়ি..! বলল নাফিস ।
কেন তোরা কি ভুতে বিশ্বাস করছ নাকি? (জিশান)
অবাস্তব কে বিশ্বাস করবে কে..?বলল হৃদয় ।
অবাস্তব হলেও আমাদের সমাজে এমন বহু লোক আছে যাদের রাতের ঘুম হারাম হয় অবাস্তব এই ভুতের ভয়ে ।
তবুও ভাবলাম যাব। একবার দেখেই আসি না ভুত বেটা দেখতে কেমন হয় !! (জিশান)
আচ্ছা হঠাৎ তোকে এই ভুতের ঠিকানা কে বলল জিজ্ঞাসা করল নাফিস ।
গতকাল রাতেই পেলাম। অপরিচিত
নাম্বার থেকে ফোন আসল ।
ফোনটা ধরে কানে লাগানোর আগেই লম্বা একটা সালাম পেলাম । সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম কে তখন লোকটি আমাকে তার ঠিকানা দিল ।
লোকটির বাবার আমলের বিশাল একবাড়ি। তার ইচ্ছা ছিল একটা হোটেল করবন সেখানে । তাই বাড়িটাকে পরিষ্কার করতে লোক লাগিয়ে কাজ করালেন ।
কিন্তু সেই দিন থেকেই বাড়িটির ভিতরে অদ্ভুত সব কিছু ঘঠছে ।রাতে কেউ সেখানে গেলেই ২য় বার যাওয়ার সাহস পায় না ।তাছাড়া আরো অদ্ভুত কিছুও নাকি হচ্ছে ঐ বাড়িটায় । তাই আমাদের সেখানে গিয়ে একবার দেখে আসতে বলল লোকটা। একটানা কথাগুলো বলল জিশান ।
আচ্ছা লোকটি আমাদের ঠিকানা কোথায় পেল বলল হৃদয় ।
আমাদের ঠিকানা আমার মামা দিয়েছেন।।(জিশান)
তুই কি ভেবেছিস..? যাবি সেখানে..? (নাফিস)
লোকটি যখন এত করে রিকুয়েস্ট করেছে তখন তো যেতেই হয় (জিশান)
তাহলে আর দেরি কেন চল কাল সকালেই যাওয়া যাক উৎসুকভাবে বলল হৃদয় ।
আচ্ছা চল কালই যাব । আর মুনা ও রাফিকেও জানিয়ে দিছ। কাল সকালেই রওনা দিব, বলল জিশান ।
তারপর যে যার বাসায় চলে গেল ।
পরের দিন......
জায়গাটার নাম অম্বলপুর। আসতে আসতে অনেক বিকেল হয়ে গেছে স্টেশনে নামতেই জিশানের ফোনটা বেজে উঠল ।
স্যার আপনারা কোথায় ...? বলল কলদাতা
এইত এইমাত্র গাড়ি থেকে নামলাম উত্তর দিল জিশান ।
একমিনিট স্যার আমি আসছি বলে ফোন কেটে দিল লোকটি ।
কিছুক্ষণ পর একজন লোক এসে হাজির হল জিশানদের সামনে ।
আপনি কি মি. জামাল...?আগন্তুক কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ম করল জিশান ।
হ্যা আমি...
কিন্তু আপনারা.... বলতে গিয়েও থেমে গেল জামাল সাহেব।
আমরা কি...?বলল নাফিস
না...মানে,ভেবেছিল আরো বড় কেউ হবেন কিন্তু আপনাদের দেখছি সবই ছেলেমানুষ...মুখ কাছুমাছু করে উত্তর দিল লোকটি।
সে পরেই দেখা যাবে... এখন চলুন বাসায় বলল জিশান ।
হ্যা চলুন চলুন ।
একটি টেক্সি দাড় করিয়ে উঠে পড়ল ওরা ।
বাড়ি পৌছাতে আরো বিশ মিনিট লাগল ।
এটা জামাল সাহেবের বাড়ি বাংলো টা এখান থেকে কিছুটা দূরে।
আপাদত জিশানরা এখানেই থাকবে রাতে বাংলোতে থাকতে দিলেন না জামাল সাহেব ।
ফ্রেশ হয়ে এল ওরা জামাল সাহেব ওদের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছেন ।
এসে বসল জিশান,নাফিস,হৃদয়,মুনা ও রাফি ।
রান্না কি আপনার স্ত্রী করেছে..? জিজ্ঞাসা করল রাফি.।
রাফির দিকে তাকিয়ে মৃদুসুরে হ্যা বলল জামাল সাহেব ।
খুব ভালই রান্না করতে পারে।
আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে কে কে আছে..? হঠাৎ প্রশ্ম করল জিশান।।
বাড়িতে তেমন কেউ থাকে না।আমি দেশের বাইরে থাকতাম আর আমার স্ত্রী বাপের বাড়িতেই থাকত ।
কোন সন্তান আমাদের।
কিন্তু এবার ভাবছি আর যাব না দেশের বাইরে বাংলোটাকে ঠিক করে একটা হোটেল দিলে বাকি জীবনটা চলে যাবে ।
কিন্তু যেদিনই আমি বাংলোতে লোক পাঠায় ওটা পরিষ্কার করতে সেইদিন থেকেই বাংলোতে সমস্যা শুরু হয় ।
একদিন কাজ করতে করতে রাত হয়ে যায়। আমি নিজেই সেদিন সেখানে ছিলাম। রাত আট টা হবে, তখন হঠাৎ কোথা থেকে কান্নার সব্দ ভেসে আসছে।
পোড়া মাংসের গন্ধ নাকে লাগল। কিছুক্ষন পর একটা সাদা পোশাক উড়ে এসে আমার গায়ে পড়ে পরে কি একটা আমার পাশ দিয়েই দৌড়ে চলে যায়।।
ভয়ে সেদিনের পর আমি আর ঐ বাংলোতে যায় নি
এর মাঝে আমার ভাই ও আরো অনেক লোক গিয়েছিল সবাই একই কথা বলল ।
এমন হয়েছে যে রাতে কেউ ঐ রাস্তা দিয়ে হাটতে ও ভয় পায় ।
হালকা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ল বাংলোর উদ্দেশ্যে ।
পড়ন্ত বিকেল । সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়লেও একেবারে লুকাইনি ।
পশ্চিমের আকাশটাকে রাঙিয়ে এখনো আকাশে ভাসছে ।
পাখিরা পিরছে আপন বাসায় । হালকা বাতাস বইছে ।
সব মিলিয়ে এক রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে ।
বাংলো টা জামাল সাহেবের বাড়ি থেকে বেশু দূরে নয় ।
অনেক বড় এরিয়া নিয়ে বাড়িটা তৈরি করেছে। বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালিতে ভরা বাগান রয়েছে ।
মাঝখানে একটা দোতলা দালান । সামনে কাঠ-কাঠি পরে আছে । বাড়িটা বেশ মজারই।
কাজ থাকাই জিশানদের রেখে চলে গেল জামাল সাহেব। জিশানদের উপর ভরসা করতে পারেন নি উনি। উনার মতে এই ছোট্ট ছেলেগুলো কি করবে অযথা নিজেদের বিপদ ডেকে আনার আগে ছাইছিলেন বিদেয় করে দিতে কিন্তু এত রিকুয়েস্ট করে আবলেন যাভে বলে মনে হয়না তাই উনি ও কিছু বলেন নি।
চার দিক টা গুরে দেখল জিশান।
সন্ধ্যা হয়ে আসাই সেদিনের মত চলে গেল । তেমন কোন ক্লু পেল না।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল জিশান...সত্যিই কি এটা কোন ভুতের নাকি কেউ ভুত সেজে ভয় দেখাচ্ছে।
কেনই বা তা করবে এলাকার একজন সম্মানিত ব্যাক্তি জামাল সাহেব কেউ তার কাজে বাধাও দিচ্ছে না ।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল জিশান।
সকালে ঘুম ভাঙল নাফিসের ঢাকে ।
নাস্তা করতে বসে আবার জিজ্ঞাসা করল জিশান
কেউ কি আপনার কাজে বাধা দিচ্ছে আংকেল...?
না তো এমন কেউ তো নেই । তাছাড়া আমার জায়গা আমি যা ইচ্ছা করব তাতে বাধা দেওয়ার জন্য কে আসবে ।
আচ্ছা আপনি এক কাজ করুন কাজের জন্য লোক ঠিক করে কাজ শুরু করে দিন ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরল ওরা । আসার সময় ছাবিটা নিয়ে আসল জিশান।।
বাংলোতে এসে ভিতরে ডুকতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে গুরে দাড়াল জিশান ।
জিশানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে লোকটি জিজ্ঞাসা করল তোমরা কারা বাবা এলাকায় তো আর দেখিনি মনে হয়?
কিছু বলতে জাচ্ছিল নাফিস তাকে থামিয়ে দিয়ে জিশান বলল জি আমরা এখানে নতুন এসেছি কাকার বাড়িতে বেড়াতে ।
ও আচ্ছা এই বাংলো তে যাচ্ছ কিছু জানো কি বলল লোকটি ।
কি জানার আছে একটা বাংলো সম্পর্কে অবাক হওয়ার ভান করে বলল জিশান ।
এই বাংলোই ভুত আছে। গত কয়েক দিনে এখানে মানুষজন অদ্ভুত সব কিছু ঘঠতে দেখেছে। তাই একটু সাবধানে থেক বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল লোকটি।
পিছন থেকে ডাকদিয়ে বলে উঠল জিশান, আংকেল আপনার নামটা কি বললেন না তো..
আমার নাম জামশেদ ।বলেই হেটে চলে গেল।
অদ্ভুত লোকত হঠাৎ এসে হঠাৎই চলে গেল বলে ভিতরে প্রবেশ করল ওরা।
তালা খুলে ভিতরে ডুকল ওরা। সব গুলো রুম গুরে গুরে দেখল । বেশ অগোছালো সব কিছু ।
কাঠখড় সব ছড়িয়ে ছিঁড়িয়ো আছে।
ছাদের উপরে উঠে এল ওরা।
কিছুক্ষণ পর চারজন লোক বাংলোতে আসল সাথে জামাল সাহেব ।
লোকগুলো কে কাজে লাগিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল জামাল সাহেব, পিছন থেকে জিশানের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেল।
একসাথে বাড়ি যাওয়া যাক বলল জিশান।
আচ্ছা আংকেল জামশেদ কে..?
ঐ তো একটু পরেই ওর বাড়ি কেন কি হয়েছে ।
না তেমন কিছু না আজ দেখা হয়েছিল তাই আরকি।
পরদিন সকাল। জামাল সাহেবের উঠানে লোকজনের কোলাহল ।
চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে এল জিশান। কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে।
জিশান কে দেখেই এগিয়ে গেল জামাল সাহেব জিশানের হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল কাল যাদের কাজ করতে এনেছিলাম তাদের একজন বলেই উঠানের দিকে আঙুল তুলে দেখাল।
চমকে উঠল জিশান। একটা মানুষকে এভাবে খুন করাও সম্ভব..?
কিছুক্ষন পর পুলিশ এল লাশটা নিয়ে চলে গেল।
জামাল সাহেব কে বলল আর জেন কোন লোককে ঐ বাংলোতে কাজের জন্য না আনে ।
গত রাতে ও জিশান ওখানে গিয়েছিল কিন্তু কিছুই তো দেখতে পাই নি ।
হাতের কাগজটির দিকে তাকাল সে।
খুলে দেখল ভিতরে লেখা : বাংলোটার কথা ভুলে যাও পরিত্যাক্ত হিসেবে ছেড়ে দাও ।
এর মধ্যেও হাসি ফুটল জিশানের মুখে ।
ভুতে তো আর চিঠি লিখতে যাবে না .....
(চলবে).....
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url