রাডার নিয়ে যত কথা রাডার কি?



সংক্ষেপে “রাডার” এমন একটি পদ্ধতি যা তড়িচ্চৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করে চলমান বা স্থির বস্তুর অবস্থান, দূরত্ব, উচ্চতা, দিক বা দ্রুতি নির্ণয় করতে পারে”। রাডার এর মানে হলো “Radio Detection And Ranging”। রাডার আবিস্কার করেন “এ এইচ টেলর” এবং “লিও সি ইয়ং“, ১৯২২ সালে। রাডার সিস্টেমটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, শত্রু বিমান সনাক্তকরণ, জাহাজ সনাক্তকরণ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এর কাজে প্রচুর ব্যবহৃত হয়।
রাডার যন্ত্র আকাশে উড়োজাহাজে, সামুদ্রিক জাহাজে এবং স্থলভাগের যে কোনো স্থানেই ব্যবহার করা যায়। স্থলভাগে বসানো রাডার যেমন বলে দিতে পারে আকাশে কোথাও শত্রু বিমানের আগমন ঘটেছে তেমনি বিমানে অবস্থিত রাডারও বলে দিতে পারে নিচে কোথায় বিমান বন্দরের অবস্থান, টার লক্ষ্যবস্তু বা তার আশেপাশের অন্য কোনো শত্রুর বিমান আছে কিনা, কত দূরে রা বিমান ছাড়ার সময়, বিমানে থাকা কালীন সময় এবং বিমান ল্যান্ড করার সময় এটি ব্যবহার করে। পুলিশ অবৈধ স্পীডে চালানো বাইক বা গাড়িকে ডিটেক্ট করতে এটি ব্যবহার করে। এমন কি পৃথিবীর এবং অন্য গ্রহ-উপগ্রহের মানচিত্র পেতে, স্যাটেলাইট এর অবস্থান জানতে নাসাও রাডার ব্যবহার করে।
অন্যভাবে ব্যবহার করলে রাডার পৃথিবীর পৃষ্ঠতল সম্বন্ধে তথ্য সরবরাহ করে বা আবহাওয়ামণ্ডলের পরিস্থিতির সম্যক ধারণা দেয়। এছাড়া অনেক দূরের বা কাছের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহের পৃষ্ঠতল এবং বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধেও এটি তথ্য প্রদান করে। রাডারকে অনেক সময় আরও পূর্ণাঙ্গ কোন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বা এর সাথে সহযোগী অন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
রাডার কিভাবে কাজ করে?
রাডারের মধ্যস্থিত একটি প্রেরক যন্ত্রের মাধ্যশে চারপাশে বেতার তরঙ্গ প্রেরণ করা হয় যা কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে এসে গ্রাহক যন্ত্রে ধরা পড়ে। গ্রাহক যন্ত্র সাধারণত প্রেরক যন্ত্রের কাছেই বা একই স্থানে অবস্থান করে। প্রতিফলিত হয়ে আসা বেতার তরঙ্গ বেশ দুর্বল হলেও একে ইচ্ছামত বিবর্ধিত করা যায়। এ কারণেই রাডার অনেক দূরের বস্তুকেও বিকিরণের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারে।
রাডারে যে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তা উৎপন্ন হয় একটি যন্ত্রাংশ দ্বারা যার নাম “ম্যাগনেট্রন“। রেডিও তরঙ্গ এবং আলো একই গতিতে পথ অতিক্রম করতে পারে; কিন্তু রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গ গুলো অনেক লম্বা হয় এবং এর কম্পাঙ্ক অনেক দুর্বল শক্তির হয়ে থাকে। আলোক তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৫০০ ন্যানোমিটার হয়ে থাকে (১ মিটার থেকে ৫০০ বিলিয়ন গুন ছোট), আর রাডারে ব্যবহৃত হওয়া রেডিও তরঙ্গ আলোক তরঙ্গ হতে মিলিয়ন গুন বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
মনে করুন এক অন্ধকার রাতে একটি বিশাল প্লেনকে একটি জনবহুল শহরে ল্যান্ড করার চিন্তা করছেন—কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রচণ্ড কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে রয়েছে, তো কীভাবে আপনি ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিরাপদে প্লেনটি ল্যান্ড করবেন? আপনি তো কিছু দেখতেই পাচ্ছেন না! প্লেন পাইলটরা রাডার নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করে থাকেন; এটি একটি দেখার মাধ্যম বা উচ্চ রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে লুকায়িত কোন বস্তুকে দেখতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় শত্রু পক্ষের বিমানকে খুঁজে বেড় করার জন্য একটিকে প্রধানত উন্নতিকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে এর প্রশস্ত ব্যবহার রয়েছে। বিমান পাইলটরা বিমান ছাড়ার সময়, বিমানে থাকা কালীন সময় এবং বিমান ল্যান্ড করার সময় এটি ব্যবহার করে। পুলিশ অবৈধ স্পীডে চালানো বাইক বা গাড়িকে ডিটেক্ট করতে এটি ব্যবহার করে। এমন কি পৃথিবীর এবং অন্য গ্রহ-উপগ্রহের মানচিত্র পেতে, স্যাটেলাইট এর অবস্থান জানতে নাসাও রাডার ব্যবহার করে। তো চলুন, এটি কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নে
রাডার স্টেশন


রাডার স্টেশন হল এক ধরনের মিনি সাইজের বেতার কিংবা টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রের মতো। এই কেন্দ্র থেকে আকাশে বেতার তরঙ্গ নিক্ষেপ করা হয়। যখন এই বেতার তরঙ্গ আকাশে কোনো কঠিন বস্তুতে আঘাত করে তখন প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এই প্রত্যাবর্তনকারী তরঙ্গই ধরা পড়ে রাডারের গ্রাহক যন্ত্রে। রাডারের গ্রাহক যন্ত্রের অংশটি প্রায় টেলিভিশনের মতো। এখানে প্রত্যাবর্তনকারী তরঙ্গের আলোর সংকেতই পর্দায় ভেসে উঠে আলোর বিন্দু রূপে। রাডারের এই তরঙ্গ খুবই দ্রুত ছুটে যায় এবং দূরের বস্তুতে আঘাত করে আবার ফিরে আসে এবং আলোর বিন্দু হয়ে পর্দায় ভাসে উঠে – এই প্রক্রিয়াটি চোখের পলকে ঘটে যায়।
রাডার এড়ানো সম্ভব কিভাবে?
Image result for radar
বিমান শনাক্ত করতে বা জাহাজ শনাক্ত করতে রাডার ব্যবহার করা হয়। তবে বিমানের ক্ষেত্রে রাডারকে প্রধান গুরুত্ব দেয়া হয়। রাডারকে ফাঁকি দেয়া কঠিন কাজ। রাডারকে ফাঁকি দিতে বা এড়াতে হলে আপনার এমন এক প্লেন প্রয়োজনীয় যা একে বারে গোপনে আর লুকিয়ে কাজ করতে পারে এবং অবশ্যই রাডারে ধরা না পড়ে। অ্যামেরিকান এয়ার ফোর্সের কাছে এমন একটি অশুভ চেহারার বিমান রয়েছে যার নাম বি২ বোম্বার; এর এই বিমানের গঠন এমন যা রাডার থেকে আসা বীম শুষে নিতে পারে ফলে রাডার আর কিছুই ডিটেক্ট করতে পারে না। সাম্প্রতি এরকম প্লেন অনেক দেশের কাছে আছে এবং অনেক দেশ তৈরির কাজে আছে।
এককথায় রাডার এমন এক জিনিস যা কোন কিছুকে ধরতে বা বুঝতে বা কোন কিছুর অবস্থান বুঝতে পারে। রাডার তরঙ্গ ব্যবহার করে এই কাজ করে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url