ঈদ উল আযহা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছেন আজ ঈদ উল আযহা এই দিনে সবাই তা সামর্থ্য অনুযায়ী উট, দুম্বা, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি কুরবানী দিয়ে থাকে তাই এটাকে ত্যাগের উৎসব ও ঈদ উল আযহা বলা হয়ে থাকে। এই দিনে প্রথমে ঈদগাহ ময়দানে সবাই একত্রিত হয়ে দুই রাকাত ঈদ উল আযহার নামাজ পড়ে কুরবানীর প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। মুসলমানদের জন্য এটি উৎসবের দিন যার তারিখ স্থানীয়ভাবে জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।
ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকায়, ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে পড়ে। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেনঃ “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর”। ইব্রাহীম স্বপ্নে এমন আদেশ পেয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম এবার ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিসহ আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করা থেকে বিরত করার জন্য ইব্রাহীম ও তার পরিবারকে প্রলুব্ধ করেছিল, এবং ইব্রাহীম শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। শয়তানকে তার প্রত্যাখ্যানের কথা স্মরণে হজ্জের সময় শয়তানের অবস্থানের চিহ্ন স্বরূপ নির্মিত ৩টি স্তম্ভে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
যখন ইব্রাহীম (আঃ) আরাফাত পর্বতের উপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ’র আদেশ পালন করার দ্বারা কঠিন পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হন। এটি ছিল ছয় সঙ্গিখ্যক পরীক্ষা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) কে তার খলিল(বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ করেন।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(১০০) অবশেষে আমি তাহাকে প্রশাশু বালকের (এসমায়িলনামক পুত্রের) সুসংবাদ দান করিলাম।
(১০১) পরে যখন সে তাহার সঙ্গে দৌড়িবার বয়ঃপ্রাপ্ত হইল, তখন সে বলিল, “হে আমার নন্দন, নিশ্চয় আমি স্বপ্নে দেখিয়াছি যে, সত্যই আমি তোমাকে বলিদান করিতেছি অতএব তুমি কি দেখিতেছ, দেখ। সে বুলিল “হে আমার পিতা, যে বিষয়ে আদিষ্ট হইয়াছ, তাহা কর; ঈশ্বরেচ্ছায় তুমি আমাকে অবশ্য সহিষ্ণুদিগের অন্তর্গত পাইবে”।
(১০২) পরে যখন তাহারা দুই জনে (ঈশ্বরাজ্ঞার) অনুগত হইল, এবং সে তাহাকে (ছেদন করিতে) ললাটের অভিমুখে ফেলিল।
(১০৩) এবং আমি তাহাকে ডাকিলাম যে, 'হে এব্রাহিম,।
(১০৪) সত্যই তুমি স্বপ্নকে সপ্রমাণ করিয়াচ; নিশ্চয় আমি এইরূপে হিতকারী লোকদিগকে বিনিময় দান করিয়া থাকি’।
(১০৫) নিশ্চয় ইহা সেই স্পষ্ট পরীক্ষা।
(১০৬) আমি তাহাকে বৃহৎবলি (শৃঙ্গযুক্ত পুং মেষ) বিনিময় দান করিলাম।
(১০৭) এবং তাহার সম্বন্ধে (সৎপ্রশংসা) ভবিষ্যদ্বংশীয়দিগের প্রতি রাখিলাম।
(১০৮) এব্রাহিমের প্রতি সেলাম। হৌক।
(১০৯) এই রূপে আমি হিতকারীদিগকে বিনিময় দান করি।
(১১০) নিশ্চয়ই সে আমার বিশ্বাসী দাসদিগের অন্তর্গত ছিল।
(১১১) আমি তাহাকে সাধুদিগের অন্তর্গত এক প্রেরিত পুরুষ এসহাক (পুত্রের) সম্বন্ধে সুসংবাদ দান করিয়াছিলাম।
(১১২) এবং তাহার প্রতি ও এসহাকের প্রতি আশীৰ্ব্বাদ করিয়াছিলাম, এবং তাহাদের সস্তানগণের মধ্যে কতক হিতকারী ও কতক আপন জীবনসম্বন্ধে স্পষ্ট অত্যাচারী হয়।
কোরআন, সূরা ৩৭ (আস-ছাফফাত), আয়াত ১০০-১১২
তাহলে বুঝতেই পারছেন কিভাবে এর উৎপত্তি হয়েছিল এবার আসি অন্য প্রসংগে - কুরবানী ইসলাম মতে ঈদুল আযহার দিনে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে অর্থাৎ যার কাছে ঈদের দিন প্রত্যূষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদ (যেমন জমানো টাকা) আছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করা ওয়াজীব। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত। মুসাফির বা ভ্রমণকারির ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়| ঈদুল আযহার নামাজ শেষে কুরবানী করতে হবে। ঈদুল আযহার নামাজের আগে কুরবানি করা সঠিক নয়।
বাংলাদেশের মুসলিমরা সাধারণত গরু ও ছাগল কুরবানি দিয়ে থাকেন। এছাড়া কেউ কেউ ভেড়া, মহিষ, উট, দুম্বাও কোরবানি দিয়ে থাকেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ আর বাংলাদেশে কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লক্ষ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫ লাখ। এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা কুরবানি করতে পারেন। তবে গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ ভাগে কুরবানি করা যায় অর্থাৎ ২, ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরিক হতে পারেন। কুরবানির ছাগলের বয়স কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। নিজ হাতে কুরবানি করা ভাল। কুরবানি প্রাণীর দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলামুখী করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলে জবাই করতে হয়।
সাধারণত আমাদের দেশে কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে, ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এবং বাকী ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা হয়। তবে মাংস বিতরণের কোন সুস্পষ্ট হুকুম নেই কারন কুরবানির হুকুম পশু জবেহ্ হওয়ার দ্বারা পালন হয়ে যায়। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।